ব্লকচেইন প্রযুক্তি একটি সুরক্ষিত এবং বিকেন্দ্রীভূত লেজার ব্যবস্থা, যা একাধিক উপাদানের সংমিশ্রণে কাজ করে। এই উপাদানগুলো একত্রে ব্লকচেইনকে কার্যকরী করে তোলে এবং এর নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে। নিচে ব্লকচেইনের মূল উপাদানগুলো এবং তাদের কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হলো:
ব্লকচেইনের মূল ভিত্তি হলো ব্লক। প্রতিটি ব্লক হলো একটি ডেটা প্যাকেট, যা নির্দিষ্ট তথ্য ধারণ করে। ব্লকচেইনের প্রতিটি ব্লকে সাধারণত তিনটি প্রধান অংশ থাকে:
ব্লকগুলো একসাথে সংযুক্ত হয়ে চেইন তৈরি করে, যা ব্লকচেইনের ধারাবাহিকতা এবং অপরিবর্তনীয়তা নিশ্চিত করে। প্রতিটি ব্লক তার পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে সংযুক্ত থাকে, যার ফলে, চেইনে থাকা ব্লকগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়। যদি কোনো একটি ব্লকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেই ব্লকের এবং পরবর্তী সকল ব্লকের হ্যাশ পরিবর্তন হয়ে যায়, যা পুরো চেইনকে অসঙ্গতিপূর্ণ করে তোলে। এটি ব্লকচেইনের নিরাপত্তার একটি প্রধান দিক।
ব্লকচেইন একটি বিকেন্দ্রীভূত (Decentralized) নেটওয়ার্কে কাজ করে, যেখানে একাধিক নোড বা কম্পিউটার একসাথে কাজ করে। প্রতিটি নোডে ব্লকচেইনের পুরো কপি থাকে এবং তারা লেনদেন যাচাই ও সংরক্ষণ করে। এই সিস্টেমটি কোনো একক কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই কাজ করে। নেটওয়ার্কের সকল নোড একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে এবং কনসেনসাস (সম্মতিতে পৌঁছানো) পদ্ধতির মাধ্যমে লেনদেন যাচাই করে।
কনসেনসাস অ্যালগরিদম ব্লকচেইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা নেটওয়ার্কের নোডগুলোকে একটি নির্দিষ্ট ব্লক বা লেনদেনে সম্মতিতে পৌঁছানোর অনুমতি দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে ব্লকচেইনের সমস্ত কপি সঠিক এবং আপডেটেড। কিছু জনপ্রিয় কনসেনসাস অ্যালগরিদম হলো:
ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্লকচেইনের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। এটি ব্লকের ডেটাকে এনক্রিপ্ট করে সুরক্ষিত রাখে এবং ব্লকগুলোর মধ্যে সংযোগ বজায় রাখে। প্রতিটি ব্লক একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ফাংশনের মাধ্যমে একটি অনন্য ডিজিটাল সিগনেচার তৈরি করে, যা ব্লকের ডেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এটি নিশ্চিত করে যে, ব্লক পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়, কারণ এটি ব্লকচেইনের সকল অংশের সাথে সংযুক্ত।
স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট হলো স্বয়ংক্রিয় চুক্তি, যা ব্লকচেইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কোড আকারে থাকে, যা ব্লকচেইনে সংরক্ষিত হয় এবং নির্ধারিত শর্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি লেনদেনে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হয়, তবে স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই লেনদেন কার্যকর করে।
নোড হলো ব্লকচেইনের একক অংশগ্রহণকারী, যা একটি কম্পিউটার বা ডিভাইস হতে পারে। প্রতিটি নোডে ব্লকচেইনের পুরো কপি সংরক্ষিত থাকে এবং তারা ব্লক যাচাই, লেনদেন সম্পন্ন এবং নতুন ব্লক যুক্ত করতে সক্ষম। নোডগুলো ব্লকচেইনের নির্ভরযোগ্যতা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে এবং তারা একত্রে কাজ করে নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখে।
ব্লক হলো ব্লকচেইনের মূল ভিত্তি এবং এটি এক ধরনের ডেটা প্যাকেট যেখানে লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। ব্লকচেইনে প্রতিটি ব্লক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ধারণ করে এবং একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত থাকে, যা একটি চেইন তৈরি করে। এই চেইনের মাধ্যমে লেনদেনের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়, যা স্বচ্ছ, অপরিবর্তনীয়, এবং নিরাপদ।
ব্লকচেইনের প্রতিটি ব্লক মূলত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত, যা একত্রে ব্লকটির গঠন এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। নিচে ব্লকের গঠন এবং এর অংশগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ব্লকের শিরোনাম ব্লকের মূল তথ্য ধারণ করে এবং এটি ব্লকের নিরাপত্তা এবং সংযোগ স্থাপন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্লক শিরোনাম সাধারণত নিচের তথ্যগুলো ধারণ করে:
ব্লকের মধ্যে থাকা লেনদেনের তালিকা ব্লকের প্রধান উপাদান এবং এটি ব্লকচেইনের মূল কার্যাবলী পরিচালনা করে। প্রতিটি ব্লক অনেকগুলো লেনদেনের তথ্য ধারণ করে এবং সেগুলো ক্রমান্বয়ে তালিকাবদ্ধ করা হয়। প্রতিটি লেনদেনে নিচের তথ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:
ব্লকের কারেন্ট হ্যাশ ব্লকের সমস্ত ডেটা, বিশেষ করে ব্লকের শিরোনাম এবং লেনদেনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এটি ব্লকটির একটি অনন্য পরিচয় প্রদান করে এবং চেইনের সাথে সংযোগ বজায় রাখে। কারেন্ট হ্যাশের মাধ্যমে ব্লকের সঠিকতা যাচাই করা যায় এবং ডেটা পরিবর্তন হলে এটি পরিবর্তিত হয়ে যায়, যা ব্লকচেইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
ব্লক তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া এবং কাজের ধরণ বুঝতে হলে, ব্লকের গঠন কীভাবে ব্লকচেইনে কাজ করে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ:
হ্যাশ (Hash) হলো একটি নির্দিষ্ট আকারের আলফানিউমেরিক স্ট্রিং, যা ডেটা বা ফাইলের একটি নির্দিষ্ট ব্লককে প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক ফাংশনের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং মূল ডেটার আকার বা ধরন যাই হোক না কেন, হ্যাশ সবসময় একটি নির্দিষ্ট আকারের হয়। হ্যাশিং অ্যালগরিদম হলো সেই ফাংশন বা পদ্ধতি, যা ডেটাকে একটি নির্দিষ্ট আকারের হ্যাশে রূপান্তরিত করে।
হ্যাশিং প্রযুক্তি ব্লকচেইন, ডেটা নিরাপত্তা, এবং অনেক ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি ডেটার অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
হ্যাশ হলো একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক সিগনেচার বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট, যা একটি নির্দিষ্ট ডেটা বা লেনদেনকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ডেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং একবার হ্যাশ তৈরি হয়ে গেলে তা অপরিবর্তনীয় হয়। অর্থাৎ, মূল ডেটা পরিবর্তিত হলে হ্যাশও পরিবর্তিত হয়ে যায়।
হ্যাশের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য:
হ্যাশিং অ্যালগরিদম হলো সেই গাণিতিক ফাংশন বা পদ্ধতি, যা ডেটাকে একটি নির্দিষ্ট আকারের হ্যাশে রূপান্তরিত করে। হ্যাশিং অ্যালগরিদম ব্লকচেইনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান, কারণ এটি ডেটার সুরক্ষা, চেইনের সংযুক্তি, এবং লেনদেনের যাচাইকরণে ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন ধরনের হ্যাশিং অ্যালগরিদম রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি সাধারণ হ্যাশিং অ্যালগরিদমের উদাহরণ দেওয়া হলো:
ব্লকচেইনে হ্যাশিং অ্যালগরিদম অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যা ব্লকচেইনের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করে:
ব্লকচেইন প্রযুক্তির মূল কাঠামো হলো ব্লকগুলোর একটি চেইন, যেখানে প্রতিটি ব্লক একটির পর একটি সংযুক্ত থাকে। এই সংযোগ পদ্ধতি ব্লকচেইনকে অপরিবর্তনীয়, নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করে তোলে। চেইনিং এবং ব্লক সংযোগের পদ্ধতি ব্লকচেইনের মূল ভিত্তি, যা নিশ্চিত করে যে প্রতিটি ব্লক সঠিকভাবে পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং চেইনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
চেইনিং হলো ব্লকচেইনের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি নতুন ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের একটি হ্যাশ ধারণ করে, যা ব্লকগুলোকে একত্রে সংযুক্ত রাখে। এই চেইনিং প্রক্রিয়া ব্লকচেইনকে অপরিবর্তনীয় করে তোলে, কারণ চেইনের একক কোনো ব্লক পরিবর্তিত হলে সেই ব্লক এবং পরবর্তী সব ব্লকের হ্যাশ পরিবর্তিত হয়ে যায়, যা নেটওয়ার্কের নোডগুলো সহজেই শনাক্ত করতে পারে।
ব্লক সংযোগের পদ্ধতি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। নিচে এই পদ্ধতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
চেইনিং ব্লকচেইন প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। এটি ব্লকগুলোকে একটি ধারাবাহিক এবং অপরিবর্তনীয় চেইনে পরিণত করে, যা ব্লকচেইনের প্রধান সুবিধাগুলোর একটি। চেইনিংয়ের কারণে:
ব্লকচেইন প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মাইনিং এবং নোড। মাইনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্লক তৈরি এবং যাচাই করা হয়, এবং নোডগুলোর মাধ্যমে ব্লকচেইনের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এই দুইটি উপাদান একসাথে ব্লকচেইনকে সুরক্ষিত, নির্ভরযোগ্য, এবং কার্যকরী করে তোলে।
মাইনিং হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে নোড বা মাইনাররা একটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোগ্রাফিক সমস্যার সমাধান করে এবং নতুন ব্লক তৈরি করে ব্লকচেইনে যুক্ত করে। এটি ব্লকচেইনের কনসেনসাস মেকানিজমের একটি অংশ এবং ব্লকচেইনের নিরাপত্তা এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক।
মাইনিং-এর মাধ্যমে ব্লকচেইনে লেনদেন যাচাই হয় এবং মাইনিং সফলভাবে সম্পন্ন হলে মাইনাররা পুরস্কৃত হয়, সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন বিটকয়েন) হিসেবে।
নোড হলো ব্লকচেইনের একটি একক অংশগ্রহণকারী, যা ব্লকচেইনের পূর্ণ কপি ধারণ করে এবং নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা, নিরাপত্তা, এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নোড ব্লকচেইনের সমস্ত লেনদেন এবং ব্লকের তথ্য ধারণ করে এবং নেটওয়ার্কে লেনদেন যাচাই, ব্লক যুক্ত করা, এবং ব্লকের ডেটা সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরও দেখুন...